উপযুঁত খনার বচনটি হলাে- “ষােল চাষে মুলা, আর অর্ধেকে
তুলা, তার অর্ধেকে ধান, বিনা চাষে পান।” নিচে খনার বচনটির
তাৎপর্য বিশ্লেষণ করে ভূমি কর্ষণের গুরুত্ব মূল্যায়ন করা হলাে-
উপযুক্ত খনার বচন দ্বারা বােঝা যায় মুলা চাষের পূর্বে ষােলটি চাষ দেওয়া প্রয়ােজন যাতে মাটি ঝুরঝুরে হয়ে যায়। তুলা চাষে আটটি ও
ধান চাষে চারটি চাষই যথেষ্ট। আবার বিনা চায়ে পানের ভালাে আবাদ করা সম্ভব। এ বচন দ্বারা মূলত বােঝানাে হয়েছে যে, ভিন্ন ভিন্ন ফসলের জন্য ভিন্ন ভিন্ন রকম চাষ প্রয়ােজন হয়। ভূমি কর্ষণ জমি প্রস্তুতির প্রথম ধাপ। ভূমি কর্ষণের সংকীর্ণ অর্থ হলাে ফসল ফলানাের উদ্দেশ্যে জমির মাটি যন্ত্রের সাহায্যে খুড়ে আলগা করা। কিন্তু ভূমি কর্ষণের সাথে নানা প্রযুক্তি জড়িত। যেমন- বীজকে অঙ্কুরােদগমের জন্য উপযুক্ত স্থানে ও সঠিক গভীরতায় স্থাপন করা, মাটিতে বায়ু চলাচলের সুবিধা সৃষ্টি করা, মাটি ওলট-পালট করা, মাটিতে অণুজীবের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করা ইত্যাদি। এসব দিক বিবেচনা করলে
জমি প্রস্তুতির গুরুত্ব সহজেই উপলদ্ধি করা যায় । তাই ভূমি কর্ষণ জমি প্রস্তুতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। উপরােক্ত আলােচনা হতে বলা যায় যে, ফসল চাষের ক্ষেত্রে ভূমি-ইল
খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক কৰ্ষণ ব্যতীত কাক্ষিত ফলন পাওয়া সম্ভব নয়।

উদ্দীপকে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সিয়ামকে খৈলের বিকল্প হিসেবে তার
গাভীগুলােকে অ্যালজি খাওয়ানাের পরামর্শ দেন। নিচে প্রাণিসম্পদ
কর্মকর্তার দেওয়া পরামর্শের যৌক্তিকতা আলােচনা করা হলাে-
অ্যালজি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় পুষ্টিকর খাদ্য যা বিভিন্ন ধরনের আমিষ
জাতীয় খাদ্য যেমন- খৈল, শুটকি মাছের গুড়া ইত্যাদির বিকল্প
হিসেবে ব্যবহার হতে পারে। শুষ্ক অ্যালজিতে শতকরা ৫০-৭০ ভাগ
আমিষ, ২০-১২ ভাগ চধি এবং ৮ ২৬ ভাগ শর্করা থাকে। এছাড়াও
অ্যালজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং বিভিন্ন ধরনের বি
ভিটামিন থাকে। অ্যালজি পানি ব্যবহার করে কম খরচে গরুর মাংস
এবং দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
উপরের বর্ণনা থেকে দেখা যাচ্ছে, কম খরচে গরুর মাংস ও দুধ উৎপাদন
বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে অ্যালজির ব্যবহার একটি কার্যকর
পন্থা, যা যেকোনাে খামারিকে সফলতা এনে দিতে পারে। তাই বলা যায়
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দেওয়া পরামর্শটি যৌক্তিক ও যথার্থ।

সফিক সাহেব তার বন্ধু রফিকের জমিতে উন্নত জাতের গম চাষ করা দেখে সেই গমের বীজ পরবর্তী মৌসুমে নিজে চাষ করবেন বলে
সিদ্ধান্ত নেন। এ কারণে তিনি নমুনা বীজ সংগ্রহ করে সেগুলাে প্রথমে আর্দ্র করেন। বীজ সংরক্ষণের পূর্বে তার আর্দ্রতা সঠিক মাত্রায় কমানাে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আর্ল বীজ সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। আবার আর্দ্রতা খুব বেশি কমে গেলে বীজ সহজে আঘাত প্রাপ্ত হয় ও ফেটে যায়। এরপর তিনি বীজের অঙ্কুরােদগম ও সতেজতা পরীক্ষা করেন। বীজের অঙ্কুরােদগম পরীক্ষার মাধ্যমে বুঝা যায় যে, বীজগুলাের মধ্যে কতভাগ অঙ্কুরােদগম হতে পারে। অপরদিকে বীজের সতেজতা পরীক্ষার মাধ্যমে বুঝা যায় যে, প্রতিকূল পরিবেশে এ বীজের অঙ্কুরিত হওয়ার ক্ষমতা কতটুকু। বীজ খুবই অনুভূতি প্রবণ। একটু অসতর্কতার
জন্য বিপুল বীজ নষ্ট হতে পারে। তাই সঠিক আর্দ্রতায় বীজ সংরক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবার, বীজের অঙ্কুরােদগম ও সতেজতা পরীক্ষা না করে সেই বীজ যদি জমিতে বপন করা হয় তাহলে ফলন খারাপ হয়ে প্রচুর লােকসান হতে পারে। উপরে বর্ণিত কারণে সফিক সাহেবের বীজ পরীক্ষার কার্যক্রমটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।